
‘ভাই আমার সর্বনাশ অইয়া গেছে। কত কষ্ট কইরা আওলাদ বাওলাদ কইরা আড়াই পাকি ধান আবাদ করলাম। কারেন্ট পোকায় খাইয়া খের বানাইয়া হালাইছে। কৃষি অফিসের লোকেরা বিষ দিবার কইল। দিছি। কিন্তু ধান আর ঘরে তুলবার পারমুনা।’-কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সন্ধানপুর ইউনিয়নের শুকনী গ্রামের আবু সাঈদ। চৌডাল গ্রামের আকবর হোসেনের অবস্থা আরও করুন। বিঘার পর বিঘা জমি খড়ে পরিণত হয়েছে তার। কীটনাশক দিয়ে ব্যর্থ হয়ে একবিঘা জমির ধান কেটে ফেলেছেন। ১২/১৩ হাজার টাকা বিঘা প্রতি খরচ কইরা এক বিঘাতে ধান পেয়েছেন মাত্র তিন মণ। কৃষাণী সুরাইয়া আক্তার দীর্ঘশাস ছেড়ে বলেন, আর ধান লাগামুনা। তাদের মতো অনেক কৃষক পোকার আক্রমণে সর্বশান্ত হতে চলেছেন। কৃষি বিভাগের গাফলতির কারণে কৃষকদের এই সর্বনাশ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঘাটাইলের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. তৌকির আহমেদ জানান, চলতি রোপা আমন মৌসুমে ঘাটাইল উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ১৯ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধান আবাদ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে।
ঘাটাইলের চৌডাল, গৌরেশ^র, শুকনী, কুশারীয়া, বগা, চেরাভাঙ্গা, সত্তরবাড়ীসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সবুজ মাঠ খড়ে পরিণত হয়েছে। ওই গ্রামের কৃষকরা তাদের জমিতে মাধবী, রঞ্জিত, বিআর-১১সহ বিভিন্ন জাতের ধান আবাদ করেছেন। তাদের হিসাবে বীজতলা তৈরি, জমি চাষ, সার-কীটনাশক প্রয়োগ, ধানের চারা রোপন, নিরানীসহ সব মিলিয়ে প্রতি বিঘা ধান আবাদে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। সবুজ ধান গাছে শীষ ধরেছে। প্রকৃতির পরশে স্বর্ণালী হলেই কৃষকের চোখে মুখে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠবে। এমন সময় কৃষকদের মাথায় বাজ পড়ে। অধিকাংশ খেতেই বাদামী গাছ ফড়িং পোকায় আক্রমণ করেছে। স্থানীয়দের ভাষায়, কারেন্ট পোকার আক্রমণে চার পাঁচ দিনের মধ্যেই সবুজ ধান গাছ খড়ে পরিণত হচ্ছে।
অতিরিক্ত উপপরিচালক উদ্যান মো. শোয়েব মাহমুদ জানান, ভ্যাপসা গরমের সময় ধান খেতে বাদামী গাছ ফড়িং দেখা দেয়। বাদামী গাছ ফড়িং একটি মারাত্মক ক্ষতিকর পোকা। প্রায় ৪ মিলিমিটার লম্বা বাদামী রং এর ছোট আকৃতির পোকা দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে। এক জোড়া পোকা ৩-৪ প্রজন্মে অন্তত ৩৫ লাখ পোকার জন্ম দেয়। এই পোকাগুলো ধান গাছের গোড়ায় বসে রস শুষে খায়। ফলে গাছ পুড়ে যাওয়ার মতো রং ধারণ করে মরে যায়। এই পোকা তার ওজনের চেয়ে অন্তত ১০-১৫গুণ বেশি খাদ্য খায়। ধানের কাইচথোর বের হওয়ার পরপরই এই পোকার আক্রমণ বেড়ে যায়। এই পোকার আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সঠিক দূরত্বে চারা রোপন, জমির আইল পরিষ্কার করণ, ধানের জমির মাটি শুকানো, সারিবদ্ধভাবে ধানের চারা লাগানো এবং আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হয়। আর আক্রান্ত হয়ে গেলে ধান গাছগুলো বিলি কেটে ফাঁকা করে কীটনাশক দিয়ে দিতে হয়। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদেরকে এই পরামর্শগুলো নিয়মিত উপসহকারি কৃষিকর্মকর্তারা দিয়ে থাকেন।